Building crack-Cause and remedy

ইংরেজিতে ক্র্যাক (Crack) শব্দের বাংলা অর্থ ‘ফাটল বা চিড়’। যেকোন ভবনেই বিভিন্ন ধরনের ফাটল দেখা দিতে পারে। তবে সব ফাটল দেখেই দুশ্চিন্তায় পড়বার কোন কারণ নেই। ফাটলটা দেখে একজন প্রকৌশলী বা বিশেষজ্ঞরা চিহিৃত করতে পারেন এটা আসলে কোন ধরণের ফাটল।
ফাটল সাধারণত দুই ধরণের
১) কাঠামোগত ফাটল,
২) অবকাঠামোগত ফাটল।
.
১) কাঠামোগত ফাটলঃ
যদি কোন ভবনের বীম, কলাম, ছাদ কিংবা কঙ্ক্রীট দেওয়ালের মধ্যে ফাটল দেখা দেয় তাকে বলে কাঠামোগত ফাটল
(Structural Cracks) । এই ধরণের ফাটল, যেকোন ভবনের জন্য
ঝুকির কারন ।
সাধারণত কাঠামোগত ফাটল
ক)নকশাজনিত ত্রুটি ও
খ) নির্মানজনিত ত্রুটির কারনে হয়ে থাকে।
.
নিচে এই ত্রুটিদ্বয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হলঃ
ক) নকশাজনিত ত্রুটিঃ
‪#‎স্থপতি‬ যে নকশা প্রণয়ন করেছেন কাঠামো প্রকৌশলী সেটিকে সঠিকভাবে মুল্যায়ন
করতে না পারা। ভবনটি কি কাজে ব্যবহৃত হবে সে সম্পর্কেসঠিক ধারণা না পাওয়া ।
অনেকসময় দেখা যায় যে, বাড়ির মালিক প্রকৌশলী বা স্থপতি কে ভবনের ব্যবহারের বিষয়টি একভাবে বলছেন আর বাস্তবে ব্যবহার করছেন অন্যভাবে। যেমন বাড়ির মালিক হয়ত
ভবনের নকশা প্রণয়নের সময় বলেছেন যে, ভবনটি আবাসিক হিসাবে ব্যবহৃত হবে কিন্তু
বাস্তবে দেখা গেল ভবনটি গার্মেন্টস/কর্মাশিয়াল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তখন অতিরিক্ত লোডের কারনে বীম এবং কলামে ক্র্যাক দেখা দেয়।
.
‪#‎মাটি‬ পরীক্ষা ছাড়াই অনুমানের উপর নির্ভর করে ভবনের ডিজাইন করা।
‪#‎স্থাপত্যের‬ কারণের বীম বা কলামের সাইজ না বাড়িয়ে যদি রডের পরিমান বাড়ানো হয়
সেক্ষেত্রওে ফাটল ধরতে পারে। বীম ও ছাদের সংযোগস্থলে ছাদের মধ্যে কর্ণার রড
ব্যাবহার না করলে ছাদে টরশোন জনিত কারনে ছাদে ফাটল দেখা দিতে পারে।
খ) নির্মানজনিত ত্রুটি: নির্মানজনিত ত্রুটির কারনেও ভবনে ফাটল দেখা দেয়।
যেমনঃ
‪#‎বীম‬ ও কলামের সংযোগস্থলে যদি রডের পরিমান বেশী থাকে তাহলে কঙ্ক্রীট ভিতরে
প্রবেশ করতে না পারার কারনে
‪#‎ছাদে‬-বীমে-কলামে যদি রডের ক্লিয়ার কভার কম হয় তাহলে বাতাসে জলীয় বাষ্প বা
মাটির অভ্যন্তরের পানি আস্তে আস্তে কঙ্ক্রীটের ভিতর ঢুকে রডে মরিচা পড়ে রডের
গুনগত মান কমার কারনে।
‪#‎কঙ্ক্রীটে‬ যদি ব্লিডিং বা সেগ্রেগেশন হয় তাহলে কঙ্ক্রীটের সিমেন্ট-বালি ও খোয়া
আলাদা হয়ে যায়। এই সমস্ত কারণে কাঠামোতে ফাটল দেখা দিতে পারে।
‪#‎কোন‬ ভবনের ঠিক পাশে যদি ভিত্তি তলের নিচ পর্যন্ত বেজমেন্ট নির্মানের জন্য মাটি
কাটা হয়, তাহলে ওই ভবনের ভিত্তি তলের নিচ হতে মাটিসহ পানি চুইয়ে চুইয়ে বের হয়ে
বেজমেন্টের জন্য নির্মিত গর্তের ভিতর চলে আসে। এতে অনেক সময় ডিফারেনশিয়াল
সেটেলমেন্টের কারনে বীম/কলামে অতিরিক্ত মোমেন্ট/সিয়ারের সৃষ্টি হয় ফলে
ভবনে ফাটল দেখা দিতে পারে।
‪#‎ভবনের‬ আশেপাশে বড় বড় গাছ-পালা থাকলে ওই গাছের শিকড়ের বৃদ্ধির কারনে
মাটির প্রকৃতি পরিবর্তন হয় ফলে ভবনে ফাটল দেখা দেয়।
‪#‎বিল্ডিং‬ কোডের নিয়মানুযায়ী/ডিজাইন অনুযায়ী কঙ্ক্রীটের মিশ্রন না হলে র্অথাৎ মিশ্রনে পানি কম বা বেশী হলে ভবনে ফাটল দেখা দিতে পারে।কারন পানি কঙ্ক্রীটের সবচেয়ে বড় বন্ধু আবার সবচেয়ে শত্রু। পানির ব্যবহার কম হলে কঙ্ক্রীটের ভিতরে তাপউদ্গারী বিক্রিয়াটি হয় না, ফলে কঙ্ক্রীটের শক্তি হ্রাস পায়। অন্যদিকে পানি বেশি হলেও কঙ্ক্রীটের শক্তি হ্রাস পায়।
‪#‎সাটারিং‬ যদি নিয়মের আগেই খোলা হয় তখন কংক্রীট পূর্ণশক্তি অর্জনের আগেই তার
উপর লোড চলে আসে। যার কারণে কঙ্ক্রীটে ফাটল দেখা দেয়।
‪#‎কিউরিং‬ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সঠিক পরিমান কিউরিং এর অভাবে যে কোন ধরনের ফাটল
দেখা দিতে পারে।
‪#‎কঙ্ক্রীট‬ ঢালাই করার সময় যদি ঠিকমত ভাইব্রটিং করা না হয় তাহলে ওই কঙ্ক্রীটের
মাঝে ফাকা কিছু অংশ থাকে ফলে হানি-কম্বে এর সৃষ্টি হয় ফলে ভবনে ফাটল দেখা
দেয়।
#কঙ্ক্রীট ঢালাই এর জন্য প্রধান উপাদান হলঃ সিমেন্ট, বালি, খোয়া এবং পানি এর
কোনটির গুনগতমান যদি খারাপ হয়।
২) অকাঠামোগত ফাটলঃ ভবনের ইটের দেয়াল বা প্লাস্টারে এক ধরনের
ফাটল দেখা দেয় । এই ধরনের ফাটল কে অকাঠামোগত ফাটল বলা হয় । এতে তেমন
দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই। একটু সতর্ক থাকলেই এ ধরণের ফাটল থেকে আমরা মুক্তি
পেতে পারি। দেয়ালের গাথনীর আগে ইটকে ভাল ভাবে ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে
রাখলে, ইটের দেয়াল গাথুনী শেষ হলে বা প্লাষ্টার করার পর ভালভাবে কিউরিং করলে এই ধরণের ফাটলের পরিমান কমবে। এছাড়া কঙ্ক্রীট আর ইটের দেয়ালের সংযোগস্থলে
যদি ষ্টিলের তারের নেট ব্যবহার করা যায় সেক্ষেত্রে সংযোগস্থলে ফাটল আসার
সম্ভাবণা হ্রাস পাবে। ফাটল যাই হোক না কেন সেটি ভবনের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনেনা। সঠিকভাবে বিল্ডিং কোড মেনে কাজ করতে পারলে এই ফাটলের ঝুকি অনেক কমে আসবে। বাংলাদেশে
বিভিন্ন জায়গায় সিটি করপোরেশন বাপৌরসভা তে পর্যাপ্ত প্রকৌশলী না থাকার কারণে শুধুমাত্র স্থাপত্য নকশাটি দেখে ভবনটির ছাড়পত্র দেয়া হয়। এতে করে ভবনটি সঠিক জায়গায়-সঠিক মাপে-সঠিক উচ্চতায় তৈরী হচ্ছে ঠিকই কিন্তু কাঠামোগত, ইলেক্ট্রিক্যাল ও নির্মাণজনিত ত্রুটি থেকেই যাচ্ছে।

0 comments:

Post a Comment