Earthquake Safety Tips Before During and After

১। আমেরিকান রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী- ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ বা ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি। অর্থাৎ কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন, তারপর কোন শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নীচে ঢুকে কাভার নিন, এমন ডেস্ক বেছে নিন বা এমনভাবে কাভার নিন যেন প্রয়োজনে আপনি কাভারসহ মুভ করতে পারেন। তাদের মতে, ভূমিকম্পে আমেরিকার খুব কম
বিল্ডিংই কলাপস করে; যেটা হয় তা হল আশেপাশের বিভিন্ন জিনিষ বা ফার্নিচার গায়ের উপর পড়ে নেক-হেড-চেস্ট ইনজুরি বেশি হয়। তাই এগুলো থেকে রক্ষার জন্য কোন শক্ত ডেস্ক বা এরকম কিছুর নীচে ঢুকে কাভার নেয়া বেশি জরুরী। auto অপরদিকে সেই উদ্ধার কর্মীর মতে বিল্ডিং কলাপস করলে ‘ডাক-কাভার’ পদ্ধতি একটি মরণ-ফাঁদ হবে। সেটা না করে
কোন বড় অবজেক্ট যেটা কম কম্পপ্যাক্ট করবে যেমন সোফা ইত্যাদির পাশে আশ্রয় নিলে যে void তৈরী হবে, তাতে বাঁচার সম্ভাবনা বেশী থাকবে। এখন রেড ক্রস কিন্তু এই ভয়েড বা ‘Triangle of life’-এর ব্যাপারটা অস্বীকার করে নি। কিন্তু যেহেতু আমেরিকায় বিল্ডিং কলাপ্স হবার সম্ভাবনা কম, তাই তাদের ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ পদ্ধতিই বিভিন্ন বস্তুর আঘাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য সবচেয়ে উত্তম। দু’টো ব্যাপারই তাই মাথায় রাখুন।

২। রাতে বিছানায় থাকার সময় ভূমিকম্প হলে উদ্ধার কর্মী বলছে গড়িয়ে ফ্লোরে নেমে পড়তে- এটা বিল্ডিং ধ্বসার পার্সপেক্টিভেই। রেড ক্রস বলছে বিছানায় থেকে বালিশ দিয়ে কাভার নিতে, কারণ সিলিং ধসবে না, কিন্তু ফ্লোরে নামলে অন্যান্য কম্পনরত বস্তু থেকে আঘাত আসতে পারে।

৩। দরজায় আশ্রয় নেবার ব্যাপারে উদ্ধার কর্মী এবং রেডক্রস উভয়েই নেতিবাচক। রেড ক্রস বলছে প্রায় এক দশক আগে থেকেই তারা এ পরামর্শ বন্ধ করেছে। (The American Red Cross has not recommended use of a doorway for earthquake protection for more than a decade)

৪। সিঁড়িতে আশ্রয় নেয়া উচিত না- এ ব্যাপারেও নিশ্চিত। এক বিশেষজ্ঞ যিনি ঐ উদ্ধারকর্মীর সবগুলো পরামর্শেরই সমালোচনা করেছেন, তিনিও বলেছেন একমাত্র এ পরামর্শটিই সবচেয়ে যৌক্তিক। এছাড়া ভূমিকম্পের সময় এলিভেটর/লিফট ব্যবহারও উচিত না।

৫। ভূমিকম্পের সময় ভেতরের দিকে না থেকে বাইরের দিকে ওয়ালের কাছে আশ্রয় নেয়া উচিত- এটা নিয়ে কোন বিরোধ পাই নি। যেটা পেয়েছি তা হল এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং এর উলটো হাইপোথিসিসও নাকি আছে যে ভেতরের দিকে থাকাই ভালো।

ভূমিকম্পের সময় বাইরের ওয়ালের কাছে আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ মূলত বিল্ডিং ধ্বসে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বলা। ভূমিকম্পে যদি দালান ধ্বসে পড়ে তবে বাইরের দিকের ওয়ালের কাছে থাকলে ধ্বংসস্তুপ থেকে তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাবার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকেFEMA-র পরামর্শ হচ্ছে এসময় ভেতরের দিকে আশ্রয় নেয়া অর্থাৎ জানালা, কাঁচ, বাইরের ওয়াল, দরজা সবকিছু থেকে দূরে থাকা। এটা মূলত আমেরিকানদের জন্য পরামর্শ, যেখানে তারা ধরে নিয়েছে ভূমিকম্পে এখানকার বিল্ডিং ধ্বসে পড়বে না, কিন্তু বাইরের ওয়াল ধ্বসে বা জানালা, কাঁচ ইত্যাদি থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অনেকে হতাহত হতে পারে। কাজেই বাংলাদেশের জন্য সমাধান হতে পারে- আপনি যদি নতুন, মজবুত কোন দালানে থাকেন, তবে FEMA-পরামর্শ অনুযায়ী ভেতরের দিকেই থাকেন- জানালা, কাঁচ, বাইরের ওয়াল সবকিছু থেকে দূরে; আর যদি পুরান ঢাকার বাড়িগুলোর মত ঝরঝরে কোন দালানে থাকেন তবে বাইরের ওয়ালের কাছে আশ্রয় নিন, দালান ধ্বসে পড়লে যেন কম জিনিসের মধ্যে চাপা পড়েন।

৬। উদ্ধার কর্মীর যেসব পরামর্শ রয়েছে তার মধ্যে একমাত্র গাড়ীরটাই সরাসরি বাদ দেয়া যায়। তিনি বলছেন ভূমিকম্পের সময় গাড়ী বন্ধ করে গাড়ী থেকে বের হয়ে বসে বা শুয়ে পড়তে। রেড ক্রস বলছে গাড়ী বন্ধ করে গাড়ীর ভিতরেই বসে থাকতে। গাড়ীর বাইরে থাকলে আহত হবার সম্ভাবনা বেশি। রেড ক্রসের এই পরামর্শ যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে দেয়া এবং এটা সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে।

৭। ভূমিকম্পের সময় কোন ফ্লোর নিরাপদ, কিভাবে দালান ভেঙ্গে পড়ে- কাত হয়ে নাকি এক তলার উপর আরেকটা?
এটা ঐ জায়গার মাটির গঠন, বিল্ডিং কিভাবে তৈরী- এটার ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে। সাধারণত ভূমিকম্পের সময় চারভাবে ফ্লোর বা দালান ধ্বসে পড়তে পারে । এগুলো হল-
top, middle and bottom floors এবং total building failure .
দালানের কোন তলা বেশি নিরাপদ- এক্ষেত্রে বেশিরভাগ মতামত হল ভূমিকম্পের সময় উপরের দিকের তলাগুলোতে দুলুনি হবে বেশি, নিচের তলায় কম। কিন্তু দালান যদি উলম্ব বরাবর নিচের দিকে ধ্বসে পড়ে, তবে নিচ তলায় হতাহত হবে বেশি, কারণ উপরের সব ফ্লোরের ওজন তখন নিচে এসে পড়বে। ১৯৮৯ সালে সানফ্রান্সিসকো এলাকায় এক ভূমিকম্পে এরকমভাবে অনেক দালান নিচের দিকে কলাপ্স করেছিল এবং তাতে নিচের ফ্লোর পুরো ধ্বসে গিয়েছিল উপরের তলাগুলোর চাপে। এছাড়া এ ভূমিকম্পে দেখা গিয়েছিল ব্লকের কর্ণারের বাড়িগুলোতে শক বেশি হয়েছিল ব্লকের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা বাড়িগুলোর চেয়ে।
৮। তবে যে ফ্লোরেই থাকুন- ভূমিকম্পের সময় বেশি নড়াচড়া, বাইরে বের হবার চেষ্টা করা, জানালা দিয়ে লাফ দেবার চেষ্টা ইত্যাদি না করাই উত্তম। একটা সাধারণ নিয়ম হল- এসময় যত বেশি মুভমেন্ট করবেন, তত বেশি আহত হবার সম্ভাবনা থাকবে। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে অফ দ্য রেকর্ড একটা কথা- যদি গ্রাউন্ড ফ্লোরে একেবারে দরজার কাছে থাকেন, তবে এক দৌড়ে বাইরে কোন খোলা জায়গায় চলে যান। সিঁড়ি-টিঁড়ি পার হয়ে যেতে হলে না যাওয়াই ভালো।
৯। সব বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে ‘আফটার শক’ বলে। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন, না হলে পচা শামুকেই শেষমেষ পা কাটতে পারে।
১০। প্রথম ভূমিকম্পের পর ইউটিলিটি লাইনগুলো (গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোন লিক বা ড্যামেজ দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।
যা আগেই করণীয়ঃ
• পরিবারের সবার সাথে বসে এ ধরণের জরুরী অবস্থায় কি করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে- মোট কথা আপনার পরিবারের ইমার্জেন্সি প্ল্যান কী সেটা ঠিক করে সব সদস্যদের জানিয়ে রাখুন।
• বড় বড় এবং লম্বা ফার্নিচারগুলোকে যেমন- শেলফ ইত্যাদি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখুন যেন কম্পনের সময় গায়ের উপর পড়ে না যায়। আর টিভি, ক্যাসেট প্লেয়ার ইতাদি ভারী জিনিষগুলো মাটিতে নামিয়ে রাখুন।
• বিছানার পাশে সবসময় টর্চলাইট, ব্যাটারী এবং জুতো রাখুন।
• রেট্রোফিট, রেট্রোফিট আবারো বলছি রেট্রোফিটিং-এর ব্যবস্থা এখনই করুন।
ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়লে করণীয়-
১। ধুলাবালি থেকে বাঁচার জন্য আগেই সাথে রুমাল বা তোয়ালে বা চাদরের ব্যবস্থা করে রাখুন
২। ম্যাচ জ্বালাবেন না। দালান ধ্বসে পড়লে গ্যাস লিক হয়ে থাকতে পারে।

৩। চিৎকার করে ডাকাডাকি শেষ অপশন হিসেবে বিবেচনা করুন। কারণ, চিৎকারের সময় মুখে ক্ষতিকারক ধুলাবালি ঢুকে যেতে পারে। পাইপে বা ওয়ালে বাড়ি দিয়ে বা মুখে শিস বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে পারেন। তবে ভাল হয় সাথে যদি একটা রেফারির বাঁশি বা হুইসেল থাকে, তার প্রিপারেশন নিয়ে রাখুন আগেই।

1 comments: